শুদ্ধাচার পুরস্কার পাওয়া রেলের এডিজি মিয়া জাহানের অনিয়মের তদন্ত দুদকে

Passenger Voice    |    ০২:৫৪ পিএম, ২০২০-১১-২৬


শুদ্ধাচার পুরস্কার পাওয়া রেলের এডিজি মিয়া জাহানের অনিয়মের তদন্ত দুদকে

ইয়াছিন হক: পেশাগত জ্ঞান ও দক্ষতা, সততার নিদর্শন, নির্ভরযোগ্যতা ও কর্তব্যনিষ্ঠা, শৃঙ্খলাবোধ, সহকর্মীদের সঙ্গে আচরণ, সেবাগ্রহীতার সঙ্গে আচরণ, প্রতিষ্ঠানের বিধিবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা, সমন্বয় ও নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে পারদর্শিতা, পেশাগত স্বাস্থ্য ও পরিবেশবিষয়ক সচেতনতা, উদ্ভাবনী চর্চার সক্ষমতা, বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি বাস্তবায়নে তৎপরতা, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার, উপস্থাপন দক্ষতা, ই-ফাইল ব্যবহারে আগ্রহ এবং অভিযোগ প্রতিকারে সহযোগিতার কারনে চলতি বছরের ৪ অক্টোবর শুদ্ধাচার পুরস্কার পেয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মো. মিয়া জাহান। জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল অনুসরণ করে কর্মক্ষেত্রে দ্রুততার সঙ্গে ও সহজে সেবা দেওয়ার স্বীকৃতি হিসেবে তাকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।।

এদিকে চলতি বছরের ২০ সেপ্টেম্বর এক যাত্রীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে রেলের নিজস্ব ক্যাটারিং সার্ভিসের কলা, রুটি, বিরিয়ানি, চিকেনফ্রাই-সহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য ক্রয় ও বিক্রয়ের ক্ষেত্রে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মিয়াজাহান কোন অনিয়ম করেছে কিনা তা নিয়ে তদন্তের ঘোষণা দেয় দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সাম্প্রতিক সংস্থাটির উপ-পরিচালক (অনুসন্ধান ও তদন্ত-২) মো. ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী এ সংক্রান্ত একটি পত্র পাঠিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে মহাপরিচালক বরাবরে।

ওই যাত্রী রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মিয়াজাহানের বিরুদ্ধে ৬ কোটি ৮৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা অনিয়মের তথ্যদিয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করে দুদকে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে রেলওয়ে এ সংক্রান্ত সকল রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত কপি দূর্নীতি দমন কমিশনকে প্রেরণের করতে অনুরোধ করা হয়।

মিয়াজাহান দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে বনলতা এক্সপ্রেস, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ও কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনে ক্যাটারিং এর আওতায় বিরিয়ানি, কলা, পাউরুটি, চিকেনফ্রাই ইত্যাদি বিক্রি করা সংক্রান্ত সরকারী আইন/বিধি বিধান/সার্কুলার, দরপত্র/কোটেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বা রেলওয়ের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় তা পরিচালনা করা হয়ে থাকলে দরপত্র আহ্বান, কার্যাদেশ, বিল প্রদান সংক্রান্ত সকল রেকর্ডপত্র দুদকের কাছে পাঠাতে হবে।

এছাড়াও রেলের এডিজি (অপারেশন) সময়কালীন উল্লেখিত ক্যাটারিং এর জন্য বিক্রি বাবদ আদায়কৃত অর্থ  সরকারী কোষাগারে জমা প্রদান সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্রও তদন্তের স্বার্থে প্রেরণের নির্দেশনা দেয়া হয়।  

উল্লেখ্য যে, যাত্রীবাহী ট্রেনের অভ্যন্তরে খাদ্য সরবরাহ ও বিপণনের ক্যাটারিং সার্ভিস এতদিন চলতো বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়। দরপত্রের মাধ্যমে বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এসব ক্যাটারিং সার্ভিস পরিচালনা করতো। সম্প্রতি রেলওয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চলন্ত ট্রেনের অভ্যন্তরে ক্যাটারিং সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য একটি ক্যাটারিং সেলও গঠন করে রেলওয়ে। কিন্তু সার্ভিসটি চালুর শুরুতেই দুদকের তদন্তের মুখে পড়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত রেলের শীর্ষ এই কর্মকর্তা।  তবে সংশ্লিষ্টরা বলছে রেলের কিছু অসাধু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা নিজেদের অপকর্ম ডাকতে মিয়া জাহানকে ফাঁসানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে এই এডিজির চাকরির অবসরের সময় আসলে রেল কর্তৃপক্ষ এই কর্মকর্তার দুই বছর সময় বাড়ানোর চেষ্টা করছিল। এডিজির অবসরের পূর্বের সময়ে এমন অভিযোগটি কারো পরিকল্পিত বলেও মনে করছেন অনেকে।

এই বিষয়ে রেলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মিয়াজাহান এর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।  

রেলওয়ে বাণিজ্যিক বিভাগের সূত্রে বলছে, রেলওয়ে চলন্ত ট্রেনে খাদ্য সরবরাহের জন্য ওটিএম (ওপেন টেন্ডার মেথড) এর মাধ্যমে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করে থাকে। বর্তমানে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে ১৮টি প্রতিষ্ঠান ৫০টি নির্ধারিত ট্রেনের ক্যাটারিং সার্ভিস দরপত্রের মাধ্যমে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসাবে পরিচালনা করে আসছে। এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে রেলওয়ের ৪ বছরের চুক্তি রয়েছে রেলের। চুক্তিতে প্রতিবছর চুক্তিমূল্যের সাথে ১০ শতাংশ হারে মূল্য বাড়ানো হয়। পূর্বাঞ্চলের ১৮টি প্রতিষ্ঠান প্রতি অর্থ বছরে ক্যাটারিং সার্ভিসের জন্য রেলওয়েকে ৬৫ লাখ টাকার রাজস্ব দিয়ে থাকে। যা প্রতিবছর ১০ শতাংশ হারে বর্ধিত করে রেলওয়ে। 

সূত্র বলছে, দরপত্রের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশেরই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।  শুধুমাত্র দুটি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি চলতি বছরের ৭ ডিসেম্বর, দুটি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি ২০২১ সালের ৩০ এপ্রিল ও ৩০ নভেম্বর এবং  তিনটি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি শেষ হয়ে যাবে। চুক্তি শেষ হয়ে যাওয়া ট্রেন এবং আগামীতে চুক্তি সময় শেষ হয়ে আসা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে ক্যাটারিং এর চুক্তি নবায়ন না করে নিজস্ব ক্যাটারিং কোম্পানি ‘বাংলাদেশ  রেলওয়ে ক্যাটারিং অ্যান্ড ট্যুরিজম সেল (বিআরসিটিসি) এর মাধ্যমে পরিচালিত করতে চায় রেলওয়ে। এ বিষয়ে রেলওয়ে গঠিত ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের  ট্রেনে ক্যাটারিং সার্ভিসে নিয়োগ ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০২০’ সম্প্রতি অনুমোদন হয়েছে মন্ত্রী সভায়।  

বিআরসিটিসি থেকে যা আয় হয়েছে, তা রেলওয়ের কাছ থেকে ইজারা নেয়া অন্য যেকোনো ক্যাটারিং  কোম্পানির চেয়ে বেশি। নিজস্ব ক্যাটারিং প্রতিষ্ঠান তদারকি, মান নিয়ন্ত্রণ ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা স্বচ্ছ করার জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয় পাঁচ সদস্যের একটি কমিটিও করেছে। এ কমিটির সুপারিশে  রেলওয়ে ক্যাটারিং সার্ভিস পরিচালনা করা হবে। তবে সার্ভিসটি চালুর শুরুতেই দুদকের তদন্ত নিজস্ব এই ব্যবস্থাপনাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে বলে মনে করছেন রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা।  

সর্বশেষ ১৫ নভেম্বর দেশের অন্যতম বিরতিহীন রেলসার্ভিস সোনাবাংলা (ঢাকা-চট্টগ্রাম) এক্সপ্রেসের খাদ্য সরবরাহে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের সাথে রেলের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। কভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে ২৬ মার্চ থেকে ট্রেন বন্ধ থাকা এবং নতুন করে ট্রেন সার্ভিস শুরুর পর স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে এই সার্ভিসে খাদ্য সরবরাহ আপাতত বন্ধ রয়েছে। রেলের নিজস্ব ব্যবস্থাপনার ক্যাটারিং সার্ভিসের মতো আগামীতেও সোনারবাংলা এক্সপ্রেসে রেলওয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় খাদ্য সরবরাহ করবে। পাশাপাশি চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে অন্যান্য ট্রেনে খাদ্য সরবরাহকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে রেলের চুক্তি নবায়ন করা হবে না বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের সংশ্লিষ্টরা।